রোকনুজ্জামান সবুজঃ
জামালপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম- দুর্নীতির ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি চলতি বছর নতুন শিক্ষকদের পদায়ন ও বদলির ব্যাপারে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি অর্থ বাণিজ্যে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে,জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি বৎসর মোট ৩২৫ জন শিক্ষক (রাজস্ব) ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। এ সব শিক্ষকদের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ২০ জুনের মধ্যে যোগদাদের কথা রয়েছে।
মেলান্দহ উপজেলায় (রাজস্ব) খাতে ১৩ জন শিক্ষকের জেলা অফিসে ২০ জুন/২৪ তারিখে যোগদান করার কথা থাকলেও যোগদান করেন ১২ জন শিক্ষক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত একটি দপ্তর আদেশ দেন এবং রেজিস্টারেও ১২ জন উল্লেখ করেন একজন অনুপস্থিত রাখেন। কিন্তু আসমাউল হুসনা নামে একজন শিক্ষক যোগদান না করায় তিনি ২৫ জুন যোগদান করতে এলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.মোফাজ্জল হোসেন খান তাকে যোগদান না করিয়ে প্রথমে ৫ লাখ টাকা উৎকোচ দাবী করেন। পরে ঐ শিক্ষকের বাবা আব্দুস ছালাম তাকে কাকুতি মিনতি করে সুদের উপর ৩ লাখ টাকা নিয়ে এসে উৎকোচ দিলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আগের অফিস আদেশ বাতিল করে একই তারিখ ব্যবহার করে আরো একটি অফিস আদেশ দিয়ে যোগদানের নির্দেশ দেন। এই মর্মে জামালপুর প্রেসক্লাবে সভাপতি সম্পাদক বরাবর উৎকোষ প্রদানের বিষয়টি ভুক্তভোগীর পিতা আব্দুস সালাম অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আরো জানা গেছে, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান যোগদানের পর থেকে শিক্ষকদের মৌখিক পরীক্ষায় তিন-চারশ পরীক্ষার্থীর কাছে বেশী নাম্বার পাইয়ে দিতে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ভাল সুবিধাস্থানে যোগদানের কথা বলে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষকের কাছে সর্বনিন্ম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব কাজে সহযোগিতা করেছেন তার অফিসের হেডক্লার্ক আলী আহাম্মদ,পিয়ন সিয়াম ও গাড়ী চালক কমল।
এছাড়া অপর একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মৌলভীরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সানজিদা হক নামে একজন শিক্ষক তিনি দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তাকে বরখাস্ত করা হলে তদস্থলে পশ্চিম লংকারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রহিমা খানম অনলাইনের আবেদন করে বদলী হন মৌলভীরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় অফিস কর্তৃক অভিযুক্ত শিক্ষককে পুনরায় তার স্থলাভিসিক্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে শূন্যে পদ না থাকায় বাধ্য হয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্তমর্তা লংকারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সিটির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও সরকারি বিধি বহির্ভূতভাবে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দ্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান।
শুধু তাই নয়, গত ২ জুলাই নতুন যোগদান প্রদানকারী শিক্ষকদের যোগদানের আদেশ পুনরায় সংশোধন করে আবারো বেশ কয়েকজন শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে নতুন কর্মস্থল প্রেরণ করেছেন। এছাড়া তিনি ১০মার্চ/২৪ ইং তারিখে যোগদানের পর থেকে অফিসে বসবাস করলেও বাড়ী ভাড়া বিল কর্তন না করে উত্তোলন করে সে টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। তার এমন অনিয়ম- দূর্নীতির কারণে জেলার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী দিন-দিন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম জানান নিয়োগপত্র যোগদান পত্র দেরিতে পাওয়ায় যোগদান করতে দেরি হয়েছে পরে ২৫ তারিখে উপস্থিত হলে যোগদানের আমার কাছে প্রথমে পাঁচ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবি করেন । আমি গরিব মানুষ বাধ্য হয়ে তিন লক্ষ টাকা সুদে করে নিয়ে তাকে দিয়েছি বলে জানান।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন দুর্নীতি অনিয়ম উৎকর্ষ গ্রহণ বন্ধে রন্ধে চলে গেছে রাষ্ট্রের জন্য কখনোই কাম্য নয় আমি এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃমোফাজ্জল হোসেন খান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি উৎকোষ গ্রহণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
উল্লেখ যে, জামালপুরে যোগদানের আগে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে থাকা কালে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি করায় তাকে ষ্ট্রেন রিলিজ করার ১৭দিন অতিবাহিত হতে না হতেই তাকে জামালপুর জেলায় পদায়ন করা হয় বলে জানা গেছে।
0 $type={blogger}:
Post a Comment