ইসলামপুরে সরকারি বরাদ্দের টাকা শিক্ষা অফিসারের পকেটে

মোহাম্মদ আলমাছ হোসেন আওয়ালঃ 

জামালপুরের ইসলামপুরে বিদ্যালয় উন্নয়নের সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা ব্যাংক থেকে গোপনে তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফেরদৌস হাসানের বিরুদ্ধে।

ফলে স্কুল মেরামতসহ উন্নয়নমূলক কাজ করে বিল ভাউচার দিয়ে মাসের পর মাস ধরেও বরাদ্দ টাকা পাচ্ছে না শিক্ষকরা। শুধু তাই নয় শিক্ষা অফিসার ফেরদৌস হাসানের দুর্নীতি অফিস ফাঁকি ও সরকারি বরাদ্দ টাকা তসরুপসহ অভিযোগের অন্ত নেই।

শিক্ষা অফিসারের কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও স্বেচ্ছাচারীতার কারণে ভেঙে পড়েছে প্রাথমিক এ উপজেলা সরকারের গৃহীত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা  ব্যবস্থা।

জানা যায়, ২০২০ সালের জুন মাসের ইসলামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন ফেরদৌস হাসান। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালনের বিধান থাকলেও তিনি থাকেন টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায়। সেখান থেকে সপ্তাহে দুই দিন সিএনজি যুগে এক ঘন্টার জন্য অফিসে আসেন।যে কারণে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরাঞ্চলের শিক্ষকরা অফিসিয়াল নানা প্রয়োজনীয় কাজে দিনের পর দিন অফিসে এসে তার সাক্ষাত পান না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রমে ও মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। শিক্ষক রাও স্কুল যাচ্ছেন মনগড়া ভাবে।

অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ইসলামপুর জেলার ঐতিহাসিক সরকারের প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা করে ৭৫টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপকরণ ৫০ থেকে ৭০ হাজার, ৮টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা সামগ্রী স্থাপন বাবদ এক লক্ষ পঞ্চাশ টাকা করে ও ১৪৪ বিদ্যালয়ে রুটিন মেরামত বাবদ ৪০ হাজার এবং ১৪টি প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপকরণ বাবদ ৫০০০ করে টাকা বরাদ্দ আসে।

শিক্ষকরা জানান, গত ৩০ জুনের আগে শিক্ষা অফিসারের বিদেশে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিসের কাজে বিল ভাউচার জমা দেন। উত্তর বিল ভাউচার দিয়ে কার্যালয় থেকে বরাদ্দের কোন দোয়া রক্ত ছার করে উপজেলা শিক্ষা অফিসের ব্যাংক হিসাবে নং (২৬০৭০০৩০০০১১০) সোনালী ব্যাংক ইসলামপুর বাজার শাখা স্থানান্তর করেন। ওই হিসাবটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের একক স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে ওই হিসাব থেকে শিক্ষকদের কাজের বিল দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা অফিস ফেরদৌস গত তিন জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৩১ লাখ টাকা তুলেন। এমনকি তিনি টাঙ্গাইলে মোহনপুর শাখা থেকেও টাকা উত্তোলন করেছেন।

শিক্ষক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, ব্যাংক হিসাবে টাকা স্বল্পতা থাকার বিষয়টি গোপন রেখে কাজ দেখার নামে বিল প্রদানের তালবাহানা করেছে। ফলে শিক্ষকরা দিনের পর দিন অফিসের ধারণা দিয়েও বিল না পেয়ে হয়রানি হচ্ছেন।

শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফেরদৌস এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারীতা এবং সরকারি অর্থ তসরুপের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা সচিব, অধিদপ্তরের মহা পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ডিগ্রি চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ নুরুলুল্লাহ অভিযোগ, তার স্কুল বরাদ্দ আসে ২ লাখ টাকা। বাকিতে নির্মাণ সামগ্রী কিনে স্কুল ধরা যায় গ্রিল ও চেয়ারসহ সব কাজ সময়মতো করেছেন।

কিন্তু শিক্ষা অফিসারের পিছনে দিনের পর দিন ঘুরেও একটি টাকাও পাচ্ছে না  তিনি। ভাটিকামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল রেখা বলেন, স্কুলের উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ লাখ টাকা। ওই বিদ্যালয়ের গভর্নিংবডির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আকন্দ ভাষ্য, বিলের অবশিষ্ট টাকার জন্য তিনি ওই শিক্ষা অফিসারের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু এতে উল্টাফল হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ঘুষের টাকা দ্বিগুণ নির্ধারণ করেছেন। ওই জন প্রতিনিধি আরো বলেন, যে স্কুলের মানসম্মত কাজ হয় তাদের জন্য ১০ হাজার টাকা আর যারা কিছুটা অনিয়ম করে সেই ক্ষেত্রে বরাদ্দের ফিফটি ফিফটি ভাগ দাবি করেন ওই শিক্ষা অফিসার। শিক্ষক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দ পেয়ে নির্মান সামগ্রীসহ দোকান থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ বাকিতে ক্রয় করে কাজ করে এখন বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা।

গত সোমবার অনেক শিক্ষক বিলের জন্য জমা হন উপজেলা শিক্ষা অফিসে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুপুরে খাবারের কথা বলে শিক্ষকদের বসিয়ে রেখে সিএনজি যুগে দ্রুত নিজ বাড়িতে চলে যান তিনি। জাতীয়করণ হওয়ার কমিউনিটির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদে জেলা বিভিন্ন উপজেলায় নিয়োগ দেয়ার কথা বলে চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই শিক্ষা অফিসার।

১৫০০ প্রকল্পের আওতায় দুইটি বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষা কার্যক্রমা থাকার সত্ত্বেও ২০-২১ অর্থবছরের ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। সেই টাকাও কোন হদিস নেই।

পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি তৎকালীন সভাপতি নওশাদ আলী জানান, শিক্ষা অবিচার বা মত ফেরদৌস ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকার কালে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা সময় ঘুষ নেয়ার দায়ে ৱ্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। এ ঘটনার শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়।

পরে তিনি প্রায় আড়াই বছর সামরিক বরখাস্ত থাকেন। দীর্ঘদিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনের মুক্তি পেয়ে পুনরায় কুমিল্লায় যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে সেখানেও তিনি ঘুষ দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষা অফিসার মো: ফেরদৌস এর ব্যাংক হিসাব থেকে অফিসিয়াল প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করলেও স্কুলে বরাদ্দর টাকা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করে বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে সেই সব বিদ্যালয়ের পরিদর্শন করে বিল দেয়া হচ্ছে।

জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সময় মতোঅফিসে না আসা, ভূয়া তথ্য দিয়ে বেশ কিছু স্কুল ভবনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফার্নিচার সরবরাহ নেয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতে প্রকল্প পরিচালক বরাবর সুপারিশও করা হয়েছে।

Share on Google Plus

About মোঃ সাইদুর রহমান সাদী

নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন; মোবাইল : 01901450501 - সংবাদ/বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন - iamsadi49@gmail.com

0 $type={blogger}:

Post a Comment