রোকনুজ্জামান সবুজঃ
জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি হওয়ায় ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের সেখ ‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে রহস্যজনক কারণে ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের সেখ মুখ না খুললেও পৌরবাসী বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের অভিযোগ, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার গুনজনে মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে দলের ভিতর থেকেই একটি পক্ষ ওঠে পরে লেগেছে।
জানা গেছে, আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগে অনাস্থা দিয়েছেন ১১ জন কাউন্সিলর। এরই মধ্যে অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দিতে বলেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে পৌরবাসীর দাবি করেছেন, মেয়র আব্দুল কাদের সেখ ‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পর থেকেই তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে দলের একটি পক্ষ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের সেখ টানা তিনবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার আগে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আট বছর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, মেয়র পদে প্রথম দুই মেয়াদে অনেকটা নির্ঝঞ্ঝাট দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুল কাদের সেখ। তবে এবার তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারী, সরকারি গুদামের মালপত্র লুট, অর্থ আত্মসাৎসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ করে মেয়র পদ থেকে তাঁকে অপসারণ চেয়ে ১১ কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। কাউন্সিলরদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাদের সেখের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তও হয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পৌর-১ শাখার উপ-সচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জামালপুরের জেলা প্রশাসককে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পৌরসভার কাউন্সিলদের স্বাক্ষরিত ১৩ নম্বর রেজুলেশনে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন (বিজেএমসির) গুদামের মালামাল ঝড়ে নষ্ট হওয়ায় টিন ও গাছপালা চুরির আশঙ্কায় পৌরসভা গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। ২০১১ সালের ২৭ জুলাই ৬ নম্বর রেজুলেশনে তৎকালীন প্যানেল মেয়র আজকের অভিযোগকারী বর্তমান প্যানেল মেয়র দেলোয়ার হোসেন লেবুর প্রস্তাবে পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন সাবেক বিজেএমসির পরিত্যক্ত জায়গা ও গুদামের বিষয়ে জনৈক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক ও মেয়রকে বিবাদী দিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে। ওই মামলা মোকাবেলা করতে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চে ২২ নম্বর রেজুলেশন করা হয়। এখন উল্টো প্যানেল মেয়র দেলোয়ার হোসেন নানাবিধ অভিযোগ তোলে মেয়র আব্দুল কাদের সেখের অনাস্থা দাবি করছে।
এছাড়া ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল ২৪ নম্বর রেজুলেশনে উল্লেখ করা করা হয়, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহন মিয়া বিজেএমসির জায়গায় পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের টেন্ডার গ্রহণের প্রস্তাব করেন। অথচ কাউন্সিলর মোহন মিয়া মেয়রের আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারীর অভিযোগ আনয়ন করেছে। এসব অভিযোগের কোনটাই বাস্তবতার সাথে মিল নেই। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা ১২৪ টি সড়ক বাতির ১২৪ টিই সচল রয়েছে। শতভাগ কাজ বুঝে পাবার পরেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান করা হয়েছে। সরকারি সম্পদ ভূমিদস্যূদের কাছ থেকে উদ্ধার এবং পৌর পরিষদ থেকে রেজুলেশন করে দরিদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রতিটি অভিযোগই অসত্য বলে পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামপুর পৌরসভার একাধিক সচেতন মানুষ জানান, মেয়র কাদেরের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রসহ একাধিক প্রভাবশালী চক্র। তাকে মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করতে প্রকাশ্য মাঠে নেমেছে চক্রটি। মেয়রকে সরানোর চক্রান্তে ক্ষমতার প্রভাব খাটানোসহ বিভিন্ন স্থানে কালো টাকা ছড়ানো এবং সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার একাধিক নাগরিক জানান, জনপ্রিয় এই মেয়রকে পৌসভার নাগরিকরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে ব্যানার পোষ্টার লাগানোর পরই চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়েছে।
এদিকে মেয়র আব্দুল কাদের শেখের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের নানা ষড়যন্ত্রের খবর প্রকাশ্য আসায় ইসলামপুর পৌরবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পৌর শহরের ধর্মকুড়া এলাকার বাবুল মিয়া, গাওকুড়ার নুর ইসলাম, ফকিরপাড়ার আকবর আলী, নটারকান্দার সুজন মিয়া, কাচারীর বাদল, দরিয়াবাদের সাজু মিয়া, মুক্তার আলীসহ অনেকেই বলেন, ‘কাউন্সিলরদের অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মূলত এমপি প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার অপরাজনীতির শিকার হচ্ছেন মেয়র আব্দুল কাদের সেখ।’ এ বিষয়ে পৌর মেয়র কাদের সেখের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোনের কল রিসিভ না করায় তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
0 $type={blogger}:
Post a Comment