জুয়েল রানা, জামালপুর:
জামালপুরের হাতে তৈরী নকশী পণ্যের সুনাম ইতিমধ্যেই দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরে। দেশ-বিদেশে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটেছে এখানকার হস্তশিল্পের। কিন্তু গত দু’বছর করোনার কারনে বেকার হয়ে পড়ে এই শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা এবং সূচি শিল্পীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নেমেছেন তারা। সারাদেশের বাজার ধরে রাখতে নকশী সূচি পণ্যের বিপুল চাহিদা মেটাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার সূচি শিল্পীরা।
জামালপুরের সাত উপজেলায় সবমিলিয়ে পঞ্চাশ হাজারের বেশী নারীকর্মী জড়িয়ে আছে এই নকশী সূচি শিল্পের সাথে। সুই-সুতায় নানা ডিজাইন, রঙ আর বর্ণে তারা ফুটিয়ে তুলছে নকশী কাঁথা, বেডকভার, শাড়ি, ফতোয়া, পাঞ্জাবী, সালোয়ার-কামিজসহ নানা সূচি পণ্য।
উন্নতমানের এখানকার নকশী সূচিপণ্য ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের সব বড় শহরের বাজার দখল করেছে। একই হারে এই পণ্যের প্রসার ঘটেছে বিদেশেও। কিন্ত করোনা সংক্রমনের কারনে গেলো দুই বছর ছন্দ পতন হয় এই শিল্পের, লকডাউন আর বিধি-নিষেধের কারনে বেকার হয়ে পড়ে এই শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা আর সূচি শিল্পীরা।
তবে চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারো ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় উদ্যোক্তারা, সুই-সুতা হাতে আবারো কর্ম ব্যস্ত সূচি শিল্পীরা।
জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের নাকাটি গ্রামের রেখা বেগম সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করে হস্ত শিল্পের কাজ করছেন প্রায় ১৫বছর ধরে। হস্ত শিল্পের কাজের টাকা দিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন স্কুলে পড়াচ্ছেন ছেলে কে। শুধু এই গ্রামের রেখা বেগমই নয়, বাড়তি দুপয়সা আয় করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন শিল্পী বেগম,সবুরা বেগম,মঞ্জুয়ারা, সীমা ও চানতারার মতো সংগ্রামী নারী’রা।
কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী আশা,বর্ষা ও জোসনা,সাবিনা জানান, নিজের হাত খরচ মেটানোর জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়ীতেই বড়দের সাথে সুই সুতার কাজ করেন। নারী উদ্যোক্তা চায়না বেগম জানান, প্রায় দশ বছর ধরে থান কাপড় কিনে বিভিন্ন নকশা ছাপ দিয়ে গ্রামে,গ্রামে কর্মীদের মাধ্যমে সূচি শিল্পের কাজ করিয়ে শহরের শো রুম গুলো পাইকারী দামে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন পার্টির কাছে বিক্রি করেন।
হস্তশিল্পের ব্যবসা লাভ জনক হওয়াতে জামালপুর শহরের অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে ছোট,বড় ও মাঝারি সাইজের শত শত হস্ত ও সূচি শিল্পের শো রুম।
জামালপুর জেলা হস্তশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, দেশ-বিদেশে জামালপুরের হস্তশিল্পের ব্যাপক কদর রয়েছে। কিন্তু করোনার কারনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তবে আবারো ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন তারা, আর এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
জেলা প্রশাসক শাবস্তী রায় জানান, জামালপুরের হস্ত শিল্পকে বাংলাদেশ সহ বিশ^ দরবারে প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হস্ত শিল্পকে জামালপুরের ব্যান্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার উন্নয়নের রুপকার মির্জা আজম এমপির সহায়তায় শহরের প্রাণ কেন্ত্রে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হচ্ছে নকশী পল্লী। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে হস্তশিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা।
জুয়েল রানা
জামালপুর।
২৮.১০.২
0 $type={blogger}:
Post a Comment